বুধবার, ১০ জুন, ২০২০

শেকড়ের মমতায় আবার ফিরতে চাই। ইমরান।

আমি আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের এই নিভৃত পল্লির সন্তান। আমার প্রিয় গ্রামের নাম হিলমিলি। যে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ডলু নদী। যেই নদীর স্রোত প্রতিনিয়ত আমাকে দূর এই প্রবাস থেকে টানে। সরু সাপের মতো আঁকাবাঁকা আমাদের এই ডলু নদী। যেই নদীর দুই কোলজুড়ে চোখ জুড়ানো সুন্দর ছিমছাম বাড়ীর সারি। নদীর এপারের মানুষের সঙ্গে ওপারের মানুষের সখ্যতা। আবার কখনো ঝগড়া, কখনো ভালোবাসাবাসি। ঝগড়া করে কদিন থাকা যায়? এপারের মানুষের নিশ্বাসের শব্দ ওপারের মানুষ শুনতে পায়। গলায় গলায়, কাঁধে কাঁধে পথ চলতেই এই দুই পারের মানুষ অভ্যস্ত।

গ্রামের কাদা মাটি মেখে বড় হয়েছি আমরা। যেই স্মৃতি গুলো কোনো দিন ভোলা যায় না, মুছা যায় না। গ্রামের নির্মল বাতাস এখনও আমাকে টানে। জেদ্দা শহরের ইট পাথরের এই নগরী আর ভালো লাগে না। গ্রামের নির্মল বায়ু, খোলা মেলা আকাশ। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেয়া যায়না এখানে। আমি সব সময় একজন স্মৃতিঘেরা মানুষ। স্মৃতিকে চোখের সামনে এনে ভাবতে ভালো লাগে। তাইতো প্রতিদিনের স্মৃতি নিয়েই চলছি অবিরত দিনের পর দিন। এভাবে করে সবাইকে ছেড়ে ৩টি বছর কেটে গেল। জীবনের জন্য ৩টি বছর নিতান্তই কম নয়, অনেক দীর্ঘ সময়। তদুপরি যদি হয় প্রবাস জীবন। স্বজন ও স্বদেশ বিহীন কর্মক্লান্ত কঠিন জীবন। যেখানে সময় খুবই দামী। যেন প্রতিটি সেকেন্ড  হিসেব করে চলে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত থাকতে হয় অবিশ্বাস্য জীবন সংগ্রামের সাইক্লোনে। 

চলমান এই সময়ের গ্যারাকলে সুখগুলো ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে। শৈশব-কৈশোর, যৌবন থেকে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি সবাই। প্রতিদিন গুচ্ছ গুচ্ছ করে স্মৃতি শুধু জমা হচ্ছে জীবনের খাতায়। ফেলে আসা স্মৃতি প্রতিটি মানুষকেই কোনো না কোনো সময় নিজের অজান্তেই কাদায় ভাবিয়ে তুলে। সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা রাগ অভিমান চাওয়া পাওয়া সবকিছুই জীবন যাপনের নিত্যসঙ্গী হয়ে স্মৃতির ভান্ডারে জমতে থাকে।

অবশেষে ফিরতে চাই প্রিয় জন্মভূমি-মাতৃভূমি-পিতৃভূমি-প্রিয় স্বজন ঘেরা চিরচেনা জনপদে,প্রকৃতির কাছে। গ্রাম,নদী,মেটোপথ মানে আমাদের আদিতে ফেরা,শেকড়ের মমতায় ফেরা, মাটির কাছে ফেরা, অরণ্যের কাছে ফেরা, সবুজের কাছে ফেরা, মমতাময়ীর কাছে ফেরা, স্বজনের কাছে ফেরা, বৃদ্ধ মায়ের আঁচলে বাঁধা স্নেহ মমতা আদরের কাছে ফেরা। স্বপ্ন-সত্য আর সুন্দরের কাছে ফেরা।অনেক দিন পর স্বদেশে ফিরব, বাড়ি দেখব, স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাবো, কিন্তু করোনা যেন সবকিছু হঠাৎ শেষ করে দিলো।এই ৩বছরে হয়তো অনেকেই হারিয়ে গেছে। অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি। তবুও ফেলে আসা জীবনের সোনামাখা স্মৃতিগুলো আমাকে এই প্রবাসে বারবার তাড়িত করে নিয়ে যায় সেই দিনগুলোর মাঝে অতীত বিন্যাসে। 

ছবিঃ Khaled Mehedi
স্হানঃ আমাদের গ্রাম হিলমিলি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জুমার নামাজটা পড়তে পারলাম না।

একটার দিকে হানিফ পরিবহনে উঠলাম। আমার কোণাকুণি সামনের সিটে বসেছেন হুজুরটাইপ একজন লোক। তিনি বাস ছাড়ার পরপরই সুপারভাইজারকে বললেন ভাই আমি জুমা ...